ঢাকা ১২:২৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ক্ষোভের ক্ষেপণাস্ত্রের মুখে ইরানের নৈতিকতা পুলিশ মাহসা হত্যাকাণ্ডে ফুঁসছে নারীরা ১৫ শহরে বিক্ষোভ

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৪:৩৪:২০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২২
  • ১০৯ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ নৈতিকতা পুলিশের হাতে আটক ২২ বছর বয়সি মাহসা আমিনির মৃত্যুর পর প্রতিবাদে টালমাটাল ইরান। নারীরা ইসলামিক প্রজাতন্ত্রের কঠোর পোশাক আইন ও প্রয়োগকর্তাদের মাথায় ছুড়ে মেরেছে ঘৃণা আর ক্ষোভের ‘ক্ষেপণাস্ত্র’।

১১ জন যেভাবে নিহত : উত্তর-পূর্বের মাশহাদে, মধ্য ইরানের কাজভিন এবং উত্তর-পশ্চিমে তাবরিজে প্রতিবাদকারীদের মোকাবিলা করতে গিয়ে তিন কট্টরপন্থি ছুরিকাঘাত কিংবা গুলিতে নিহত হয়েছেন। দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর শিরাজে নিরাপত্তা বাহিনীর একজন সদস্য নিহত হয়েছেন।

কাজভিনে ছুরিকাঘাতে নিহত হন একজন। এর আগে ছয় বিক্ষোভকারীর মৃত্যুর বিষয় নিশ্চিত করেছিলেন ইরানের কর্মকর্তারা। এদের চারজন মাহসা আমিনির জন্মপ্রদেশ কুর্দিস্তানে এবং অন্য দুজন কেরমানশাহে মারা যান। তবে এ ছয় বিক্ষোভকারীর মৃত্যুর দায় স্বীকার করেনি ইরানি কর্তৃপক্ষ।

সেদিন কী ঘটেছিল : ১৩ সেপ্টেম্বর তেহরানে যখন তাকে আটক করা হয়, তখন আমিনির মাথার হিজাবের নিচ দিয়ে কপালের ওপর কিছু চুল বেরিয়ে ছিল বলে অভিযোগ করেন নৈতিকতা পুলিশ। এই বাহিনীর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী প্রচণ্ডভাবে ভেঙে পড়ার এক পর্যায়ে কোমায় চলে যান তিনি। তিন দিন পর পুলিশ হেফাজতে হাসপাতালেই মারা যান মাহসা। তবে তাকে শারীরিকভাবে নির্যাতনের অভিযোগ অস্বীকার করেছে পুলিশ।

নৈতিকতা পুলিশ কারা : গাশত-ই এরশাদ (গাইডেন্স পেট্রোল) হলো ইরানের বিশেষ পুলিশ ইউনিট, যাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ইসলামিক নৈতিকতার সম্মান নিশ্চিত করা। ইসলামি রীতিবিরুদ্ধ বা অশালীন পোশাক পরিহিত লোকজনকে আটক করা। বাজার, শপিং সেন্টার , বাসস্ট্যান্ড, রেল স্টেশনে দাঁড়িয়ে থেকে নারীদের পোশাক-পরিচ্ছদের ওপর নজরদারি করে তারা।

ওরা খুবই কঠোর : তেহরানের অতিরক্ষণশীল তৎকালীন মেয়র মাহমুদ আহমাদিনেজাদ ২০০৪ সালে প্রেসিডেন্ট পদের জন্য প্রচারণা চালানোর সময় নিজেকে এ বিষয়ে আরও বেশি প্রগতিশীল দেখাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু পরের বছর তার নির্বাচনি বিজয়ের পরপরই আনুষ্ঠানিকভাবে গাশত-ই এরশাদ প্রতিষ্ঠিত হয়। নৈতিকতা পুলিশের কঠোর পদ্ধতির সমালোচনা করতে থাকে জনগণ। তারা মহিলাদের আটক করে তখনই মুক্তি দেয়, যখন কোনো আত্মীয় ভবিষ্যতে নিয়ম মেনে চলার আশ্বাস দেন। ইসফাহানের মধ্য শহর থেকে একজন নারী বলেন, ‘লিপস্টিক লাগানোর কারণে আমি আমার মেয়েসহ গ্রেফতার হয়েছিলাম। তারা আমাদের থানায় নিয়ে যায় এবং আমার স্বামীকে আসতে বলে। একটি কাগজে সই করতে বলে যে ভবিষ্যতে হিজাব ছাড়া বের হতে পারব না।’

বিপ্লবোত্তর ডিক্রি : ‘খারাপ হিজাব’ কিংবা অন্যান্য বাধ্যতামূলক পোশাক ভুলভাবে পরার বিরুদ্ধে ইরানি কর্তৃপক্ষর লড়াই শুরু হয়েছিল ১৯৭৯ সালের ইসলামি বিপ্লবের পরপরই। এর প্রধান লক্ষ্য ছিল মহিলাদের শালীন পোশাকে অভ্যস্ত হতে বাধ্য করা। এর আগে ক্ষমতায় ছিলেন পশ্চিমাপিন্থ শাসক শাহ মোহাম্মদ রেজা পাহলভি। ওই সময়ে তেহরানের রাস্তায় মিনিস্কার্ট এবং এলোচুলে ঘুরে বেড়ানোর দৃশ্য ছিল খুবই স্বাভাবিক। ইসলামি প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠার কয়েক মাসের মধ্যে শাহ আমলে প্রতিষ্ঠিত নারী অধিকার রক্ষার আইন বাতিল শুরু হয়।

লড়াইটা শুরু হয়েছিল তখনই : খোমেনির ডিক্রি সত্ত্বেও মহিলাদের যথাযথ পোশাক নির্ধারণ করতে কর্তৃপক্ষের কিছু সময় লেগেছিল। কোনো সুস্পষ্ট নির্দেশনা না থাকলেও পোস্টার এবং ব্যানার বানিয়ে অফিসের দেওয়ালে টানানো হয়েছিল ছবি, আর বলা হয়েছিল, এই নিয়মে পোশাক পরে অফিসে প্রবেশ করা বাধ্যতামূলক।

মানবাধিকারকর্মী মিসেস কার বলেন, ‘বাধ্যতামূলক হিজাবের বিরুদ্ধে লড়াইটা ব্যক্তিগত পর্যায়ে শুরু হয়েছিল তখন থেকেই। আমরা আমাদের চুল সঠিকভাবে না ঢেকেও আমরা সৃজনশীল ছিলাম।’

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

ক্ষোভের ক্ষেপণাস্ত্রের মুখে ইরানের নৈতিকতা পুলিশ মাহসা হত্যাকাণ্ডে ফুঁসছে নারীরা ১৫ শহরে বিক্ষোভ

আপডেট টাইম : ০৪:৩৪:২০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২২

হাওর বার্তা ডেস্কঃ নৈতিকতা পুলিশের হাতে আটক ২২ বছর বয়সি মাহসা আমিনির মৃত্যুর পর প্রতিবাদে টালমাটাল ইরান। নারীরা ইসলামিক প্রজাতন্ত্রের কঠোর পোশাক আইন ও প্রয়োগকর্তাদের মাথায় ছুড়ে মেরেছে ঘৃণা আর ক্ষোভের ‘ক্ষেপণাস্ত্র’।

১১ জন যেভাবে নিহত : উত্তর-পূর্বের মাশহাদে, মধ্য ইরানের কাজভিন এবং উত্তর-পশ্চিমে তাবরিজে প্রতিবাদকারীদের মোকাবিলা করতে গিয়ে তিন কট্টরপন্থি ছুরিকাঘাত কিংবা গুলিতে নিহত হয়েছেন। দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর শিরাজে নিরাপত্তা বাহিনীর একজন সদস্য নিহত হয়েছেন।

কাজভিনে ছুরিকাঘাতে নিহত হন একজন। এর আগে ছয় বিক্ষোভকারীর মৃত্যুর বিষয় নিশ্চিত করেছিলেন ইরানের কর্মকর্তারা। এদের চারজন মাহসা আমিনির জন্মপ্রদেশ কুর্দিস্তানে এবং অন্য দুজন কেরমানশাহে মারা যান। তবে এ ছয় বিক্ষোভকারীর মৃত্যুর দায় স্বীকার করেনি ইরানি কর্তৃপক্ষ।

সেদিন কী ঘটেছিল : ১৩ সেপ্টেম্বর তেহরানে যখন তাকে আটক করা হয়, তখন আমিনির মাথার হিজাবের নিচ দিয়ে কপালের ওপর কিছু চুল বেরিয়ে ছিল বলে অভিযোগ করেন নৈতিকতা পুলিশ। এই বাহিনীর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী প্রচণ্ডভাবে ভেঙে পড়ার এক পর্যায়ে কোমায় চলে যান তিনি। তিন দিন পর পুলিশ হেফাজতে হাসপাতালেই মারা যান মাহসা। তবে তাকে শারীরিকভাবে নির্যাতনের অভিযোগ অস্বীকার করেছে পুলিশ।

নৈতিকতা পুলিশ কারা : গাশত-ই এরশাদ (গাইডেন্স পেট্রোল) হলো ইরানের বিশেষ পুলিশ ইউনিট, যাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ইসলামিক নৈতিকতার সম্মান নিশ্চিত করা। ইসলামি রীতিবিরুদ্ধ বা অশালীন পোশাক পরিহিত লোকজনকে আটক করা। বাজার, শপিং সেন্টার , বাসস্ট্যান্ড, রেল স্টেশনে দাঁড়িয়ে থেকে নারীদের পোশাক-পরিচ্ছদের ওপর নজরদারি করে তারা।

ওরা খুবই কঠোর : তেহরানের অতিরক্ষণশীল তৎকালীন মেয়র মাহমুদ আহমাদিনেজাদ ২০০৪ সালে প্রেসিডেন্ট পদের জন্য প্রচারণা চালানোর সময় নিজেকে এ বিষয়ে আরও বেশি প্রগতিশীল দেখাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু পরের বছর তার নির্বাচনি বিজয়ের পরপরই আনুষ্ঠানিকভাবে গাশত-ই এরশাদ প্রতিষ্ঠিত হয়। নৈতিকতা পুলিশের কঠোর পদ্ধতির সমালোচনা করতে থাকে জনগণ। তারা মহিলাদের আটক করে তখনই মুক্তি দেয়, যখন কোনো আত্মীয় ভবিষ্যতে নিয়ম মেনে চলার আশ্বাস দেন। ইসফাহানের মধ্য শহর থেকে একজন নারী বলেন, ‘লিপস্টিক লাগানোর কারণে আমি আমার মেয়েসহ গ্রেফতার হয়েছিলাম। তারা আমাদের থানায় নিয়ে যায় এবং আমার স্বামীকে আসতে বলে। একটি কাগজে সই করতে বলে যে ভবিষ্যতে হিজাব ছাড়া বের হতে পারব না।’

বিপ্লবোত্তর ডিক্রি : ‘খারাপ হিজাব’ কিংবা অন্যান্য বাধ্যতামূলক পোশাক ভুলভাবে পরার বিরুদ্ধে ইরানি কর্তৃপক্ষর লড়াই শুরু হয়েছিল ১৯৭৯ সালের ইসলামি বিপ্লবের পরপরই। এর প্রধান লক্ষ্য ছিল মহিলাদের শালীন পোশাকে অভ্যস্ত হতে বাধ্য করা। এর আগে ক্ষমতায় ছিলেন পশ্চিমাপিন্থ শাসক শাহ মোহাম্মদ রেজা পাহলভি। ওই সময়ে তেহরানের রাস্তায় মিনিস্কার্ট এবং এলোচুলে ঘুরে বেড়ানোর দৃশ্য ছিল খুবই স্বাভাবিক। ইসলামি প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠার কয়েক মাসের মধ্যে শাহ আমলে প্রতিষ্ঠিত নারী অধিকার রক্ষার আইন বাতিল শুরু হয়।

লড়াইটা শুরু হয়েছিল তখনই : খোমেনির ডিক্রি সত্ত্বেও মহিলাদের যথাযথ পোশাক নির্ধারণ করতে কর্তৃপক্ষের কিছু সময় লেগেছিল। কোনো সুস্পষ্ট নির্দেশনা না থাকলেও পোস্টার এবং ব্যানার বানিয়ে অফিসের দেওয়ালে টানানো হয়েছিল ছবি, আর বলা হয়েছিল, এই নিয়মে পোশাক পরে অফিসে প্রবেশ করা বাধ্যতামূলক।

মানবাধিকারকর্মী মিসেস কার বলেন, ‘বাধ্যতামূলক হিজাবের বিরুদ্ধে লড়াইটা ব্যক্তিগত পর্যায়ে শুরু হয়েছিল তখন থেকেই। আমরা আমাদের চুল সঠিকভাবে না ঢেকেও আমরা সৃজনশীল ছিলাম।’